Wednesday, July 10th, 2019




ময়মনসিংহ নগরজুড়ে যানবাহনের নৈরাজ্য, দেখার নেই কেউ।

তাওহীদ হাসান ,ময়মনসিংহ  প্রতিনিধি : ময়মনসিংহ নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেস ও রেজিষ্ট্রেশন বিহীন যাত্রীবাহী বাসসহ সিএনজি অটো রিক্সা, ব্যাটারীচালিত রিক্সা, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র ও টেম্পো। এসব যানবাহনের চালক ও প্রভাবশালী মালিকেরা নগরীর যেখানে সেখানে খেয়াল খুশিমত গড়ে তুলেছে বিভিন্ন ষ্ট্যান্ড। এসব ষ্ট্যান্ড ঘিরে চলেছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। এর ভাগ যাচ্ছে নানা মহলে। ফলে নগরজুড়ে যানবাহনের নৈরাজ্য স্থায়ীরূপ নিয়েছে। এমতাবস্থায় যানবাহনের নৈরাজ্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে ময়মনসিংহ। এতে দিনভর যানজটে নাকাল হচ্ছে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষসহ নগরবাসী। সময়মত গন্তব্যে পৌছাতে পারছে না কেউই। অথচ এটি দেখার কেউ নেই! এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ ময়মনসিংহের নাগরিক নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রাজধানী ঢাকা থেকে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে বের করে দেয়া থ্রি হুইলার টেম্পো অবাধে চলাচল করছে ময়মনসিংহে। ঢাকায় নিষিদ্ধ এই যানটি ময়মনসিংহে কীভাবে চলাচলের বৈধতা পেল প্রশ্ন নগরবাসীর। বাংলাদেশ রুট ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটি এর অনুমোদনহীন থ্রি হুইলার ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিক্সা প্রতিদিন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ময়মনসিংহে। রয়েছে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মাহিন্দ্র ও সিএনজি অটো রিক্সাসহ ফিটনেস বিহীন যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস পর্যন্ত। ফিটনেস, রেজিষ্ট্রেশন ও অনুমোদনহীন সব ধরনের যানের নিরাপদ জায়গা হচ্ছে ময়মনসিংহ। এসব যানবাহনের চালক ও প্রভাবশালী মালিকেরা নগরের যেখানে সেখানে খেয়াল খুশিমত গড়ে তুলেছে ষ্ট্যান্ড। নগরীর ব্যস্ততম চরপাড়া মোড়জুড়ে রাস্তার একপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে সিএনজি অটো রিক্সা, মাহিন্দ্র, মাইক্রোবাস ও এম্বুলেন্স ষ্ট্যান্ড। ফলে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা চরপাড়া মোড় থেকে পলিটেকনিক পর্যন্ত যানজটে অচল হয়ে পড়ছে নগরজীবন। মাত্র ৫ মিনিটের এই পথ পার হতে সময় লাগছে ৪০ মিনিট পর্যন্ত। এর প্রভাবে চরপাড়া থেকে ত্রিশাল বাসষ্ট্যান্ড ও ভাটিকাশর হয়ে পাটগুদাম ব্রীজ মোড় পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ছে। এসময় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসা জরুরি রোগীদের ভোগান্তির সীমা থাকছে না।

নগরীর পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রীজ মোড় ও টাউনহল মোড় সংলগ্ন মুমিনুন্নিসা সরকারী মহিলা কলেজের হাসপাতালে সিএনজি অটো রিক্সার হাট বসছে। যানজট নিরসনে পাটগুদাম ব্রীজ মোড় সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। সম্প্রসারিত জায়গা জবরদখল করে বসানো হয়েছে সিএনজি অটো রিক্সার ষ্ট্যান্ড। ফলে যানজট লেগেই থাকছে এই মোড়ে। মুমিনুন্নিসা মহিলা কলেজের সামনে সিএনজি অটো রিক্সা, ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের ষ্ট্যান্ড সরাতে ময়মনসিংহ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির নিয়মিত মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত থাকলেও তা কার্যকর করতে পারেনি ময়মনসিংহ প্রশাসন। ফলে ব্যস্ততম এই মোড়জুড়ে দিনভর যানজটে নাকাল হচ্ছে উত্তরবঙ্গ ও টাঙ্গাইলগামী দূরপাল্লার যাত্রীসহ শিক্ষার্থী ও নগরবাসী। এর পাশে টাউনহল মোড়ে রাস্তার দুই পাশ জবরদখল করে রাতারাতি গড়ে তোলা হয়েছে পালকি নামে পিকআপ ভ্যানের অবৈধ ষ্ট্যান্ড। ত্রিশাল বাসষ্ট্যান্ড থেকে পদ্মা গেটলক নামক যাত্রীবাহী বাসষ্ট্যান্ড মাসকান্দায় সরিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। অথচ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর না করে উল্টো এই ষ্ট্যান্ড থেকে নতুন করে যোগ করা হয়েছে শালবন পরিবহন নামের আরেকটি বাস সার্ভিস। এ নিয়ে হতবাক নগরবাসী।

ত্রিশাল ও ভালুকাগামী যাত্রীবাহী এই দুটি পরিবহন প্রতিদিন বদরের মোড় ও চরপাড়া মোড় হয়ে যাতায়াতের সময় তৈরি হচ্ছে অসহনীয় যানজট।

এসবের বাইরে নগরীর বদরের মোড়ে, মহিলা ডিগ্রী কলেজের পাশে, স্টেশন রোডের তাজমহল মোড়ে, দীঘারকান্দা বাইপাস ও আকুয়া বাইপাস মোড়ে, সানকিপাড়া লেভেল ক্রসিং এলাকাসহ বিভিন্ন মোড়ের রাস্তার ওপর গড়ে উঠেছে ইজিবাইক, সিএনজি অটো রিক্সা ও টেম্পোর ষ্ট্যান্ড। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি এসব ষ্ট্যান্ডের কোন অনুমোদন নেই। একশ্রেনীর চালক ও মালিকেরা গায়ের জোরে এসব ষ্ট্যান্ড গড়ে তুলেছেন।

অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের নামে এসব ষ্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পুলিশের নামেও মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এসব ষ্ট্যান্ড ও অনুমোদনহীন যানবাহনের কারনে চরপাড়া, বদরের মোড়, ত্রিশাল বাসষ্ট্যান্ড, নতুন বাজার, জিলা স্কুল মোড়, সিকে ঘোষ রোড, গাঙিনাপাড়, পাটগুদাম ব্রীজ মোড়সহ পুরো নগর যানজটে অচল থাকছে প্রতিদিন। স্থানীয় সূত্রমতে,u ময়মনসিংহ নগরীতে প্রায় সাত হাজার ইজিবাইক, প্রায় ২০ হাজার ব্যাটারী চালিত রিক্সা, এক হাজার মাহিন্দ্র, শতাধিক পালকি নামের পিকআপ ও ১০ হাজারের বেশি সিএনজি অটো রিক্সা চলাচল করছে।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি এ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় নগরবাসীর ভোগান্তি শিকার হচ্ছে। ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ত্রিশাল বাসষ্ট্যান্ড সরানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার জন্য মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে প্রয়োজনীয় জায়গা করে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য অবৈধ ষ্ট্যান্ড সরিয়ে দিতেও স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, নগরের কোথায় ষ্ট্যান্ড থাকবে কি থাকবেনা সেটি দেখার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ