Sunday, April 12th, 2020




সাতকানিয়ায় করোনায় ব্যবসায়ীর মৃত্যু, ৪০০ পরিবার লকডাউন

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আরো ৫৮টি পরিবার এবং লোহাগাড়ায় ১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ১টি মার্কেট লকডাউন করা হয়েছে। এর আগে সাতকানিয়ায় ৩৪২টি পরিবার লকডাউন করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় ৪০০টি পরিবার, ১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ১টি মার্কেট লকডাউন করা হয়। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন এসব পরিবার ও প্রতিষ্ঠান লকডাউন ঘোষণা দিয়ে মাইকে প্রচার করেন এবং লাল পতাকা টাঙিয়ে দেন।

সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি আলীনগরের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যাওয়ার পর চমেক হাসপাতালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হতে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট গতকাল শনিবার রাতে হাতে পাওয়ার পর ওই ব্যক্তির শরীরে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। এরপর ওইদিন রাতে পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডটি পুরো লকডাউন ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের লোকজনের মধ্যে পরস্পরের সংস্পর্শের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার পর অন্যান্য পরিবার, হাসপাতাল ও মার্কেট লকডাউন ঘোষণা করেন।

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র মতে, পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে ৩৪৩ পরিবার, মাদার্শা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মক্কাবাড়ি এলাকায় ১০ পরিবার, ২ নং ওয়ার্ডের রূপনগরে ১২ পরিবার, সাতকানিয়া পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সামিয়ার পাড়ায় ২ পরিবার, ৫ নং ওয়ার্ডের ছিটুয়া পাড়ায় ১৫ পরিবার, ৭ নং ওয়ার্ডের ভোয়ালিয়া পাড়ায় ৩৩ পরিবারসহ মোট ৪০০ পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে।

অন্যদিকে, লোহাগাড়ায় সিটি হাসপাতাল এবং হাসপাতাল সংলগ্ন মোস্তফা সিটি ভবনটি লকডাউন করা হয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ওসমানী জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সিরাজুল ইসলামের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের লোকজনের মধ্যে পরস্পরের সংস্পর্শের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার পর মোট ৪০০ পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। এসব পরিবারে ৩৭৬৫ জন সদস্য রয়েছে। আর ওই রোগীকে সাতকানিয়ার কেরানীহাট আশশেফা হাসপাতালে নেওয়ার পর যে ডাক্তার চিকিৎসা দিয়েছেন এবং যেসব স্টাফ ওই সময়ে দায়িত্বে ছিল তাদেরকে এবং এসব স্টাফের পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তার পরিবারের সদস্য, হাসপাতালে আনা নেওয়ার সময় থাকা লোকজন এবং দাফন-কাফনের সময় থাকা লোকদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের নমুনা সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে একটি টিম পাঠানো হয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্র্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর এ আলম জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুরো চট্টগ্রামের মধ্যে সাতকানিয়ার এটি প্রথম মৃত্যু। তার শরীরে করোনার সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শুরুতে পশ্চিম ঢেমশার ৩ নং ওয়ার্ডটি লকডাউন করা হয়। পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে সিরাজুল ইসলামের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী লোকদের সাথে সংস্পর্শে আসা মানুষদের চিহ্নিত করে মোট ৪০০টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ জানান, সাতকানিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তাকে ঘরে গিয়ে নুর মোহাম্মদ নামের এক পল্লী চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়েছিল। আর ওই পল্লী চিকিৎসক লোহাগাড়া সিটি হাসপাতালের সুপারভাইজার। ওই ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়ার পর পল্লী চিকিৎসক নুর মোহাম্মদ আরো ২ দিন সিটি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন। সুপারভাইজার হওয়ার কারণে তাকে হাসপাতালের ডাক্তার ও স্টাফদের সাথে কথা বলতে হয়েছে এবং হাসপাতালের সব জায়গায় গিয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্বপালন কালে হাসপাতাল সংলগ্ন মোস্তফা সিটি মার্কেটেও আসা যাওয়া করেছে। হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফরাও ওই মার্কেটে গেছে। এজন্য হাসপাতাল এবং মার্কেটটি লকডাউন করা হয়েছে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সিরাজুল ইসলামকে চিকিৎসা দেওয়া পল্লী ডাক্তার ও লোহাগাড়া সিটি হাসপাতালের সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ জানান, মারা যাওয়া সিরাজুল ইসলাম আমার প্রতিবেশী। তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে ডাকতে আসার পর তাদের মুখে করোনার উপসর্গের কথা শুনে প্রথমে আমি যেতে চাইনি। তখন তাকে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে জানায়। ফলে আমি যেতে রাজি হই। আমি গিয়ে রোগী দেখার পর মারা যাওয়ার বিষয়টি বলি। এরপরও তারা আবার হাসপাতালে নিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ